রাত ১১ টার দিকে হটাত দূর থেকে ভেসে আসা গুলির শব্দ। একটু বিচলিত হলাম। নিচে নেমে দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলাম ঘটনা কি? ‘মুশকিল নেহি, মুশকিল নেহি’ বলে দারোয়ান আবার নিজের জায়গায় গেলো। বুঝলাম, আলু পটল কেনার মত গুলির শব্দ এখানে খুব সাধারণ ব্যাপার। অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে। ঘুমাতে গেলাম।
বন্ধের দিনগুলো আমার শুয়ে বসে আর ইন্টারনেট ঘেটে কেটে যায়। নিরাপত্তার জন্য কোথাও বের হওয়া মানা। তবুও সকাল থেকে ভাবছিলাম কোথাও বের হওয়া যায় কিনা। সাথে যুক্ত হলেন বাংলাদেশ থেকে আসা কনিকা দিদি আর পাকিস্তান থেকে আসা নাবিল। দিদি ঘোরার ব্যাপারে নাচুনে বুড়ি আর নাবিল একপায়ে দাঁড়ানো। বের হলাম ইতিহাস বিখ্যাত সম্রাট বাবরের সমাধিস্থল দেখতে আর কাবুলের খাবারের স্বাদ গ্রহন করতে।
বাবর গার্ডেনে আফগানিস্তানের বাসিন্দাদের জন্য প্রবেশমূল্য ৩০ আফঘানি কিন্তু খারেজী বা বিদেশিদের জন্য ২৫০ আফঘানি। নাবিলকে আফগানিস্তানের বাসিন্দা হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। ওকে বললাম দেখো ৩০ আফঘানিতে টিকেট কাটা যায় কিনা। বেচারা মুখ কালো করে কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এলো। বুঝলাম খারেজী ক্যাটাগরিতে ধরা খাইছে।
বাবরের সমাধি এখানে বাগ-ই-বাবর বা বাবর গার্ডেন নামে পরিচিত। ১৬ শতকের প্রথম দিকে মোঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহাম্মাদ বাবর এই বাগান প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন এবং কালে কালে তার উত্তরাধিকারী মোঘল সম্রাটেরা এর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করেন।
সিড়ি বেয়ে ঢুকলাম মূল বাগানে। পাহাড়ের পাদদেশে একটুকরো সৌন্দর্জ্য। বাংলাদেশের বোটানিকাল গার্ডেন এ গেলে বুঝতে পারবেন এটা প্রেমিক প্রেমিকার বাদাম খাবার উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু এখানে বাদাম খাদকের সংখ্যা অনেক কম। এরা এক কাপ চায়ের অর্ডার দেয়না। বরঞ্চ বাসা থেকে কেটলি ভরে গ্রিন টি নিয়ে যায়। এখানে দেখলাম অনেকেই সবুজ ঘাসে বসে বসে গ্রিন টি খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।
সম্রাট বাবরের সমাধিস্থল তালা বদ্ধ অবস্থায় থাকে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এখানে শুধু সম্রাট বাবরের ই না তার এক ছেলে, এক নাতির ও কবর। বাবর মারা যান ১৫৩০ সালে আগ্রায় এবং সেখানেই তাকে সমাধিস্ত করা হয় কিন্তু এর ১০ বছর পরে তাকে কাবুলস্থ বাবর গার্ডেনে সমাধিস্ত করা হয়।
জেলখানার বন্দি যেমন জেল থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, আমরাও তেমনি সব কিছু মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। আসলেই বাগানটা অনেক সুন্দর।
এবার বের হবার পালা। নিচে কয়েকটা গহনার দোকান আছে। বের হবার সময়ে আমি একটা ব্রেসলেট কিনলাম। বাংলাদেশি টাকায় ৭০ টাকার মত হবে। মেয়েদের গহনাও সস্তা দেখলাম। একসেট ধাতুর মালার দাম জিগ্যেস করলাম, বলল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯৬০ টাকা। দরদাম করলে হয়তো ৫০০ টাকায় কেনা যাবে।
এবারে কাবুলের বিখ্যাত কাবাব আর নানের স্বাদ গ্রহনের পালা। বিদেশীদের জন্য অনেক ভালো ভালো হোটেল আছে কাবুল শহরে কিন্তু আমরা বেছে বেছে আসল কাবাব যেখানে বানায় সেখানে গেলাম। হোটেলগুলোতে কোন চেয়ার নেয়। ছোট বিছানার মত, তিনদিকে কোল বালিশ। বাংলা সিনেমার বাইজি নাচের কথা মনে পড়ে গেলো।এখানে সবায় কোলবালিশে হেলান দিয়ে কাবাব আর নান খায়।
আমরা অবশেষে একটা হোটেল পেলাম যেখানে একটি টেবিল আছে। আমাদের দেশের হোটেলগুলোতে ঢুকতেই চোখে পড়ে গ্রিলের চাক্কা ঘুরছে আর এখানে চোখে পড়ে সারি সারি দুম্বা ঝুলানো। এটা ঠিক কক্সবাজারে সমুদ্রের মাছ খাওয়ার মত। যেই মাছ পছন্দ করবেন সেটা ভেজে দেয়া হবে। আমরা একটা দুম্বার কিছু অংশ ভুনা এবং কাবাব করার জন্য বললাম। এরা মসলা ব্যবহার করে খুব কম। তাজা দুম্বার মাংস ভুনা এবং কাবাব। অসাধারণ স্বাদ। নাবিল কাবুলি পোলাও অর্ডার করেছে। আমিও এক চামচ চেখে দেখলাম। জিভে লেগে আছে। সাথে লাচ্চির মত কিছু একটা দিলো কিন্তু স্বাদটা আমাদের লাচ্চির মত অত মিস্টি নয়।
আরো অনেক লেখার আছে। কিন্তু এখন আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা। হোটেল থেকে বেচে জাওয়ায়া কিছু নান আর কাবাব নিয়ে এসেছিলাম। ওগুলো আমায় ডাকছে।
@prodip, Поздравляю!
Ваш пост был упомянут в моем хит-параде в следующей категории: